★ডাক্তার ও নার্স সংকট প্রকট।
★রোগী আসলেই রেফার করা হয় জেলা বা বিভাগীয় শহরের হাসপাতালগুলোতে।
★বন্ধ অপারেশন থিয়েটার, এক্সরে মেশিন, এম্বুলেন্স।
★৩ উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের একটিতেও চিকিৎসক নেই।
আশিস রহমান ::
জনবল সংকটে ভেঙে পড়েছে দোয়ারাবাজার উপজেলার স্বাস্থ্যসেবা।
উপজেলার প্রায় আড়াই লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র ভরসা ৫০ শয্যাবিশিষ্ট দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
হাসপাতালটি ২০২৩ সালে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও কার্যত এটি ৩১ শয্যাতেই রয়েগেছে। দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ সকল বিভাগেই চিকিৎসক পদ শূন্য রয়েছে। মাত্র ৩ জন চিকিৎসক দিয়ে চলছে হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম।
চিকিৎসক না থাকায় যে কোন রোগী আসলেই রেফার করা হয় জেলা বা বিভাগীয় শহরের হাসপাতালগুলোতে। হাসপাতালে ২৫ জন নার্স পদের বিপরীতে রয়েছে মাত্র ৬ জন নার্স। এরমধ্যে ৩ জন নার্স পড়াশোনার জন্য ছুটিতে আছেন।
এছাড়াও দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিজার অপারেশন থিয়েটারটি উদ্বোধনের পর থেকেই বন্ধ রয়েছে। গাইনি কনসালটেন্ট না থাকায় সিজারিয়ান অপারেশন সম্ভব হচ্ছে না। ফলে দুর্গম এই উপজেলার গর্ভবর্তী মহিলাদের প্রসব কার্যক্রম বিভাগীয় শহর কিংবা জেলা সদরে গিয়ে করাতে হচ্ছে। এতে ভোগান্তির শেষ নেই মানুষের। অন্যদিকে টেকনেশিয়ান না থাকায় হাসপাতালের একমাত্র এক্সরে মেশিনটিও কাজে আসছেনা। ফলে রোগীদের এক্সরে পরীক্ষা ব্যাহত হচ্ছে। দীর্ঘ একযুগেরও বেশি সময় ধরে হাসপাতালে এম্বুলেন্সের ড্রাইভার নেই।
তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, চাহিদা দিয়েও ডাক্তার, নার্স পাওয়া যাচ্ছেনা।
হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা সুরমা ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামের বাসিন্দা ফারজানা আক্তার বলেন, হাসপাতালে গর্ভবতী নারীদের চিকিৎসার সেবার জন্য কোনো গাইনি ডাক্তার নেই। উপজেলা পর্যায়ে সরকারি হাসপাতালে অন্তত একজন হলেও গাইনি ডাক্তার থাকা খুবই জরুরি।
দোয়ারাবাজার সদর ইউনিয়নের মাস্টারপাড়া এলাকার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইসলাম বলেন, দোয়ারাবাজার হাসপাতালে উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার শত শত মানুষ প্রতিদিনই সেবা নেওয়ার জন্য আসেন। কিন্তু এখানে প্রয়োজনীয় ডাক্তার না থাকায় সেবা পাওয়া যাচ্ছেনা। অনেকে বাধ্য হয়ে প্রাইভেট হাসপাতালে যাচ্ছেন কিন্তু সবারতো প্রাইভেট হাসপাতালে ব্যয়বহুল চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই। জনস্বার্থে হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডাক্তার ও নার্স দ্রুত নিয়োগের দাবি জানাই।
এদিকে, শুধু ৫০ শয্যা বিশিষ্ট দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সই নয়, জনবল সংকটে উপজেলার ৩টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সবকটিরই স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমও খুঁড়িয়ে চলছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, বাজিতপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও দোহালিয়া ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কোনোটিতেই চিকিৎসক নেই। কেবলমাত্র একজন করে উপসহকাীর কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার (সেকমো) দিয়ে চলছে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পুরো কার্যক্রম। চিকিৎসক না থাকায় রোগীদের ভোগান্তি প্রকট আকার ধারণ করেছে।
উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার (সেকমো) মনিরুল ইসলাম জানান, লক্ষীপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রতিদিন প্রায় অর্ধশতাধিক রোগী চিকিৎসাসেবা সেবা নিতে আসেন। চিকিৎসক, মিডওয়াইফ ও অফিস সহকারিসহ উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অন্যান্য সকল পদ দীর্ঘদিন ধরে খালি রয়েছে। জনবল সংকটের কারণে একাই সবকিছু সামলাতে হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতি সপ্তাহে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়েও ডিউটি করতে হচ্ছে।
দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু সালেহীন খান জানান, হাসপাতালে ঔষধ সংকট নেই কিন্তু ডাক্তার ও নার্স সংকটের কারণে চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. জসিম উদ্দিন জানান, জেলার সব হাসাপাতালেই ডাক্তার সংকট। তবে দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার সংকট প্রকট। এব্যাপারে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে অবহিত করেছি। ডাক্তারের চাহিদা জানিয়েছি।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স জনবল সংকটে ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্যসেবা
- আপলোড সময় : ২৩-০৪-২০২৫ ১১:৪১:৪৭ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৩-০৪-২০২৫ ১১:৫১:৪৫ অপরাহ্ন

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ